দোলা তার নানী বাড়ি বেড়াতে যাবে বলে প্রবল আগ্রহ নিয়ে তার মা নির্মলার সাথে ঘাটে এসে দেখে ঘাটে কোন লঞ্চ নেই। নেই আগের মত মানুষজন, নেই বাহারী খাবারের পশরা সাজিয়ে বসা দোকানিরাও। দোলার প্রাণচাঞ্চল্য স্বভাব থেকে বেশ মলিন হয়ে পড়ে। টিকেট কাউন্টারে থাকা লোকদের মারফত জানতে পারে নারায়ণগঞ্জ থেকে লঞ্চ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাসে যাত্রা করতে পারেনা বলে ছোট্ট দোলার আশায় গুড়ে বালি পড়ায় বিষন্ন মনে বাড়ি ফিরেছে। নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করণে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের ছয়টি রুটে চলাচলকারী ছোট লঞ্চের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় দোলার মত হাজারো যাত্রীরা পড়েছেন চরম দূর্ভোগে। ছোট লঞ্চ বন্ধ হলেও কয়েকটি বড় লঞ্চ এই রোডে চলছে। তবে নির্দিষ্ট একটি সময়ে লঞ্চ গুলো চলাচল করায় অনেকেই বিকল্প পথে ফিরছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। কেউ আবার গন্তব্যে যেতে অপেক্ষা করছেন দীর্ঘ সময়।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর থেকে মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, মতলব, মোহনপুর, শরীয়তপুরসহ ছয়টি রুটে প্রায় ৭০টি ছোট ছোট লঞ্চ চলাচল করত। প্রায় ৩০ বছরের বেশি পুরনো ও লক্কড়ঝক্কড় মার্কা এসব লঞ্চ প্রতি বছরই দুর্ঘটনায় পতিত হয়। ঘটে প্রাণহানি। ২০২১ সালে ৪ এপ্রিল এসকেএল থ্রি মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ সাবিত আল হাসান ডুবে ৩৪ জন এবং চলতি বছরের ২২ মার্চ রূপসী বাংলা ৯ মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় এমএল আফসার উদ্দিন ডুবে ১০ যাত্রী নিহত হন।
এ দুর্ঘটনার পর থেকেই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বি আইডব্লিউটিএ ছোট লঞ্চ চলাচলে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে। গত ৩ এপ্রিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সভা শেষে এ ছোট লঞ্চ চলাচলের ওপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয়।
ছোট লঞ্চ বন্ধ করে বড় লঞ্চ চালু করায় খুশি যাত্রীরা। তাদের অভিযোগ, ছোট লঞ্চ প্রতি ঘণ্টায় নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর থেকে চলাচল করত। বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর এবং চাঁদপুর নৌরুটে একটি করে বড় লঞ্চ চলাচল করছে। তাদের দাবি, প্রতি ঘণ্টায় না হোক ২ ঘণ্টা পর পর যেন লঞ্চ চলাচল করে।
যাত্রী রুহুল আমিন জানান, বড় লঞ্চে যাত্রা নিরাপদ হয়েছে। আগে ছোট লঞ্চে চলাচল করতে গিয়ে আতঙ্কে থাকতাম। কিন্তু বড় লঞ্চে সেই আতঙ্ক নেই। ভাড়া একটু বেশি। আগে প্রতি ঘণ্টায় লঞ্চ ছাড়া হতো। সেখানে এখন দিনে লঞ্চ ছাড়ছে মাত্র একটি। এতে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর যুগ্মপরিচালক মাসুদ কামাল জানান, যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে ছোট লঞ্চ বন্ধ করে বড় লঞ্চ দেয়া হয়েছে। আগামীতে যাত্রী চাপ বাড়লে এ বড় লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হবে।