ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১২ মে ২০২২
  1. আন্তর্জাতিক
  2. এক্সক্লুসিভ
  3. খেলা
  4. জাতীয়
  5. তথ্যপ্রযুক্তি
  6. নগর-মহানগর
  7. নাসিক-২০২১
  8. বিনোদন
  9. রাজনীতি
  10. লাইফ-স্টাইল
  11. লিড
  12. লিড-২
  13. লোকালয়
  14. শিক্ষা
  15. শিক্ষাঙ্গন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিমানের বিকল্প ইঞ্জিন উদ্ভাবন করেছে রায়হান

ডেইলি নারায়ণগঞ্জ স্টাফ
মে ১২, ২০২২ ৬:৪০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় বিমানের ইঞ্জিন বিকল হলেও বিকল্প ইঞ্জিন ব্যবহার করে নিরাপদে ল্যান্ডিং করবে বিমান, এমন প্রযুক্তির আবিষ্কার করেছে নারায়ণগঞ্জের জহির রায়হান। উদ্ভাবক রায়হানের দাবি, স্বল্প ব্যয়ের এ প্রযুক্তি স্থাপন করা হলে একদিকে ব্যয়বুহুল বিমানগুলো যেমন ক্ষতির সম্মুখিন হবে না, তেমনি জান মালের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করবে এই পযুক্তি। টানা পনের বছর গবেষনা শেষে উদ্ভাবিত এই প্রকল্পের নামকরণ করেছেন ‘বিডি ০০৭ এন’। সরকারি সহায়তা পেলে এই প্রযুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুফল পাবে সাড়া বিশ্বের সকল বিমান, এমনটাই মনে করছেন প্রযুক্তির আবিষ্কারক কাজী জহির রায়হান।

নারায়ণগঞ্জের গোগনগর ইউনিয়নের মশিনাবন্দ এলাকার কাজী জহির রায়হান (৩৮) সৈয়দপুর বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষে বাংলা সাহিত্যে অনার্সে (স্নাতক) ভর্তি হন।

বিমানের বিকল্প ইঞ্জিন উদ্ভাবন করেছে রায়হান

ঢাকা কলেজের বাংলা সাহিত্যের ছাত্র হলেও গদ্য আর পদ্যের চেয়ে কারিগরি বিদ্যাটাই যেন একমাত্র পছন্দ ছিল জহির রায়হানের। পারবারিক কারণে শেষ বর্ষের পরীক্ষাটা দিতে না পেরে হতাশ হলেও হাল ছাড়েননি। সঙ্গী ছিল সেই কারিগরি বিদ্যাটাই। ১৫বছরের নিরলস শ্রম আর একাগ্রতার কাছে হার মেনেছে হতাশা। বাংলা সাহিত্যের ছাত্র জহির রায়হান আবিস্কার করেছেন বিমানের বিকল্প ইঞ্জিনের থিউরি, এমনটাই দাবী তার। এখন শুধু আর্থিক সহযোগিতা পেলে এই থিউরিকে তিনি বাস্তবিক( প্রাকটিক্যালি) রুপ দিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন আর এতে প্রায় ৫২জন টেকনিশিয়ান নিয়ে সময় লাগবে কমপক্ষে ২মাস।

ছোটবেলা থেকেই এলাকাতে বেশ ডানপিটে ও মেধাবী হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে বেশ। ছাত্র জীবনে শুরু করেন সাংবাদিকতা। এছারাও যন্ত্রাংস নিয়ে তার আগ্রগ বেশি থাকায় স্থানীয়ভাবে বন্ধুমহলে তিনি হারকিউলিস নামেও পরিচিত। রায়হানের বাড়িতে প্রবেসের সড়কটি যতটা সরু ঠিক তার বিপরীত তার চিন্ত-চেতনা। ছোটবেলা থেকেই মানুষের জন্য কিছু করতে চাইতেন তিনি। তাই শিক্ষা জিবন থেকেই শুরু করেন সাংবাদিকতা। পথশিশূদের জন্য করেন পাঠশালা।

জানাগেছে, ২০০৫ সালে তেহেরানে একটি ইরনী সামরিক বিমান স্কাইস্ক্র্যাপের উপর ভেঙে পরে প্রাণ হারায় ১১৫ জন। ঘটনাটি রায়হানকে নাড়া দেয়। এরপর থেকে বিমান দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি কিভাবে হ্রাস করা যায়, সে চিন্তা সবসময় তার মাথায় ঘুরপাক খায়। সেই থেকেই শুরু করেন এই বিষয়ে গবেষণা। তবে শুরুতে পরিবারে সমর্থন না পেয়ে দুই বছর গোপনে ইন্টারনেটে ও স্থানীয়ভাবে বিমান সংক্রান্ত নানা বই সংগ্রহ করে পড়েন, দেখেন সংশ্লিষ্ট নানা ডকুমেন্ট্রি। এরপর ২০০৭ সাল থেকে বিমানের বিকল্প ইঞ্জিন আবিষ্কারের কাজে হাত দেনে জোড়েশোরে। একে একে পনের বছর পর ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর প্রযুক্তিটির চুড়ান্ত পর্যায়ে উপনিত হন।

বিমানের বিকল্প ইঞ্জিন উদ্ভাবন করেছে রায়হান

যদিও শুরুটা এতোটা মশৃণ ছিলনা রায়হানের। পরিবারের ও সমাজের বিভিন্ন স্তরে তাকে অপমান-অপদস্ত হতে হয়েছে পদে পদে। পাড়া প্রতিবেশীরা অনেকেই তাকে পাগল বলে মনে করতো। তবে তার অদম্য আগ্রহ শেষ পর্যন্ত পরিবারের সমর্থন এনে দেয়। বিমানের সাতটি স্থানে মোট ১৪১টি যন্ত্র প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এই প্রযুক্তি স্থাপন করা যাবে। বায়ান্ন জন অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান ষাটদিন কর্ম সম্পাদনের পর প্রযুক্তিটি প্রতিস্থাপিত হবে প্রতিটি বিমানে। বিকল হয়ে যাওয়া ইঞ্জিনের বিপরীতে বিকল্প ইঞ্জিন মাত্র ছয় থেকে সাত সেকেন্ডের মধ্যে তার কাজ শুরু করবে। এই প্রযুক্তিটি তিনশত আসনের বিমানে প্রতিস্থাপন ব্যায় হবে বত্রিশ লাখ টাকার মত। তবে তিনশত থেকে চারশত আসনের বিমানের জন্য খরচ কিছুটা বাড়বে। স্থানীয়ভাবে তৈরী করা যাবে এর সকল যন্ত্রাংস, এমন দাবি উদ্ভাবকের।

বিমানের বিকল্প ইঞ্জিন উদ্ভাবন করেছে রায়হান

মশনাবন্দ গ্রামের লিটন দেওয়ান (৩৯) বলেন, ‘অয় ছোটকাল থেকেই একটু ইঞ্জিনিয়ারিং বেশি করতো। সাইকেল-হুন্ডা যাই পাইতো তাই লইয়া ইঞ্জিনিয়ারিং করতো। রায়হানরে আমরা সবাই হারকিউলিস বইল্লা ডাকতাম। তয় যা বানাইসে এইটা যদি মানুষের কাজে লাগে এইটা আমাদের মহল্লার সুনাম, দেশের সুনাম’।

রায়হানের পিতা কাজী কবির হোসেন (৭৪) বলেন, ‘শুরুতে রায়হানকে অনেক বুঝাইতাম। পড়াশুনায় বেশ ভাল ছিল। চাইসিলাম বিদেশে পাঠাইয়া দেই, কিন্তু অয় নাছোরবান্দা। এমন বিমান বানাইবো, যেই বিমান ইঞ্জিন নষ্ট হইলেও ভেঙে যাবে না। প্রথমে পাগল মনে হইতো, পরে মনে হইলো না সে কিছু একটা করবে। তবে যেই জিনিস টা আবিষ্কার করছে, এইটা সরকারি সহায়তা ছাড়া বাস্তবায়ন সম্ভব না। সরকার এই প্রযুক্তির কারিগরি দিক বিবেচনায় নেয় তবে প্রযুক্তিটি মানুষের কল্যানে কাজে আসবে’।

বিকল্প ইঞ্জিনের আবিষ্কারক জহির রায়হান ঢাকা পোষ্ট কে জানায়, ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল দেশেরে জন্য, মানুষের জন্য কিছু করবো। সেই থেকেই সংবাদিকতা পেশায় আসি। সম্ভবত ২০০৫ সালে একটি বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। এতে শতাধিক মানুষ মারা যায়। আমার খুব কষ্ট লাগে, সেই থেকেই আমার মাথায় আসে বিমান দুর্ঘটনায় কিভাবে জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি হ্রাস করা যায়। সেই থেকেই আমি এইটাকে আমার ড্রিম প্রযেক্ট হিসেবে মনে করে কাজ শুরু করি।

আপনিতো বাংলা সাহিত্যের ছাত্র, তো বিমানের এই প্রযুক্তি নিয়ে কিভাবে কাজ করলেন? এমন প্রশ্নে জবাবে রায়হান বলেন, প্রথমে বিষয়টি আমার নিজের কাছেও অসম্ভব মনে হয়েছিল। পরে আমি বিভিন্ন স্থান থেকে বিমান সংশ্লিষ্ট বই পত্র সংগ্রহ করি। এ থেকে আমার একটা বেসিক ধারণা জন্মায়। তবে আমার অনুপ্রেরণা ছিল বিমানের আবিষ্কারক অলবার রাইট ও গুলবার রাইট। তারা সাইকেল মিস্ত্রি হয়ে যদি বিমান আবিষ্কার করতে পারে, তবে আমি কেন পারবো না। সেই থেকে চলে আমার গবেষণা, যখন পঞ্চম বর্ষে তখন আমি কিছুটা নিশ্চিত হই যে এইটা সম্ভব, দশম বর্ষে মুটামুটি নিশ্চিত হইযে এইটা সম্ভব। সর্বশেষ ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হই।

আপনার প্রযুক্তি কি ধরনের বিমানে ব্যবহার করা যাবে ও এর ব্যয় কত হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার এই প্রযুক্তিটি সাতটি বিশেষ ইঞ্জিনের মাধ্যমে মোট ১৪১টি যন্ত্রাংসের সংযুক্তিতে প্রতিষ্ঠিত হবে। পযুক্তিটি বাস্তবায়নে বায়ান্ন জন টেকনিশিয়ানের দুই মাসের মত সময় লাগবে। এবং দুই শত আশি থেকে তিনশত আসনের বিমানের জন্য খরচ হবে বত্রিশ লাখ টাকা। এই প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত ইঞ্জিনের আকার ও ওজন বিমানের জন্য বিবেচনা করেই তৈরি হবে।

মানুষের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় যেন প্রযুক্তিটি তিনি বাস্তবায়িত করে জনকল্যানে কাজে লাগাতে পারেন, এইজন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এবিষয়ে গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজর আলী ঢাকা পোষ্টকে জানায়, আমি শুনেছি আমার এলাকর মশিনাবন্দ গ্রামের রায়হান নামের একটি ছেলে বিমানের বিকল্প ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছে। তবে আমি সড়েজমিনে দেখিনি। যদি সে এরকম কিছু করে থাকে, তবে এটা অবশ্যই প্রসংশার। আমিও দীর্ঘজীবন জাপানে ছিলাম, করিগরি বিষয়ে যে কোন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে সব কিছু বিচার বিশ্লেষণ শেষে যদি প্রযুক্তিটি সফলতা পায় তবে বাংলাদেশ সাড়া বিশ্বে যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে মনে করি।

আরোও পড়ুন

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।